শায়লা জাবীন :
ব্যক্তিত্ব। বাংলাদেশের মেয়েদের এই একটা বিষয় আমরা কখনোই তৈরি হতে দিই না। খুবই সচেতনভাবে আমরা মেয়েদের পরগাছা হিসেবে তৈরি করি। শৈশবে মায়ের বারণ, কৈশোরে ভাইয়ের নিয়ন্ত্রণ, তারুণ্যে প্রেমিকের চোখ রাঙানি, যৌবনে স্বামীর সম্পত্তি। এরপর ছেলেমেয়েদের তাচ্ছিল্য আর বার্ধক্যে নাতি-নাতনীদের টাট্টু ঘোড়া। পুরো জীবনচক্র ঘাটলে দেখা যাবে একজন মেয়ের স্বাধীনভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা নেই।
নারীবাদ, সাম্যবাদ নিয়ে এখন অনেক কথা হয় কিন্তু সেগুলো আদতে তাতে নারীর সামাজিক অবস্থানের ওপর কোনো প্রভাব পড়ে না। ধনীরা একটা সময় যখন জীবনের সব স্বাচ্ছন্দ্য অর্জন করে তখন বিষণ্ণতায় ভুগতে শুরু করে। ঠিক তখনই তারা গরিবদের সাহায্য করার নামে একধরনের বিলাসিতা শুরু করে। তাই আদতে যেটাকে আমরা ধনীদের বদান্যতা হিসেবে দেখি সেটা আসলে তাদের দায়িত্ব ছিল।
একইভাবে পুরুষেরা সব সুবিধা ভোগ করে যখন দেখে জীবনে কোনো বিনোদন নেই তখন নারীবাদ নিয়ে লাফালাফি শুরু করে। আর তাতে হাওয়া দেয় বর্তমানের পুঁজিবাদি সমাজ ব্যবস্থা। এর মধ্যে যদি কোনো নারীর ব্যক্তিত্ব যদি সত্যি সত্যি তৈরি হয়ে যায় তাহলে তখন সবাই মিলে আদাজল খেয়ে তার পেছনে লাগা হয়। বাংলাদেশে হাজার হাজার এনজিও থাকার পরও যেমন গরিবের ভাগ্য হাজার বছরে বদলায় না তেমনি নারীর অধিকার নিয়ে চায়ের কাপে ঝড় উঠলেও বাস্তবে এর প্রয়োগ নেই।
তবুও কিছু কিছু মেয়ে নিজেকে একটা সময় আলাদা সত্তা, আলাদা মানুষ হিসেবে কল্পনা করে। খুঁজে ফেরে নিজের ব্যক্তিত্ব এবং একটা সময় দাঁড়িয়ে যায় নিজের পায়ে। কিন্তু সেই পথটা বন্ধুর। সেই পথের প্রত্যেকটা বাঁকে বাঁকে তাকে বিভিন্ন বাধা অতিক্রম করতে হয়। অনেকেই এক সময় হাল ছেড়ে দিয়ে আবারও কম্প্রোমাইজের জীবনে ফিরে আসে। কিন্তু একেবারে হাতেগোনা কিছু মেয়ে ঘাড়টা সোজা করে এগিয়ে চলে সামনে।
যতই সামনে যেতে থাকে ততই তার জন্য আরও বড় বাধা অপেক্ষা করে। আর এই এক একটি বাঁধা তাকে আরও বেশি শক্তিশালী করে। দিন শেষে সে হয়ে উঠে একজন আলাদা সত্তা, আলাদা ব্যক্তি, স্বতন্ত্র মানুষ। তখন আর তাকে অমুকের মেয়ে, তমুকের বোন, ওই ব্যাডার প্রেমিকা, হেই ব্যাডার বউ, এই ছেলের মা পরিচয়ে পরিচিত হতে হয় না।
আমার বন্ধু শায়লা জাবীন এমনই এক ব্যক্তিত্বের নাম। সে আমার বন্ধু এই বিষয়টা আমার জন্য প্রচণ্ড সম্মানের। নিশ্চয়ই আমার আগের জন্মের কোনো ভালো কাজের পুরস্কার হিসেবে এমন একজন বন্ধু পেয়েছি। সাধারণ জীবনযাত্রার সব রকমের প্রতিবন্ধকতা চিন্তা করলে বলতে হয় সে আসলে এক জীবনে পার করেছে বহু জীবন।
একজন মেয়ের জীবনে যত ধরনের বাঁধা আসা সম্ভব তার জীবনে সেগুলোর সবই এসেছে এবং বহুগুণে বর্ধিত হয়ে এসেছে।কিন্তু সে নিজের চারিত্রিক দৃঢ়তায় পার করেছে এবং করছে একের পর এক সকল বাঁধা। এভাবেই সে হয়ে উঠেছে এক ইস্পাত কঠিন ব্যক্তিত্ব। এই দীর্ঘ জীবনযাত্রার কোনো প্রতিবন্ধকতায় তার সাহিত্য পাঠের ক্ষেত্রে বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি।
ছোটবেলা থেকেই পড়ার পাশাপাশি লিখেছে বিদ্যালয়ের স্মরণিকাতে। নিজের মতো করে লিখে সেগুলো আটকে রেখেছিল খাটের বাক্সে। এরপর একসময় লিখেছে ইথারের পৃথিবীতে। বলায় বাহুল্য কালের স্রোতে সেগুলোর সবই একসময় হারিয়েও গেছে। কিন্তু এর কোনো কিছুই তাকে হতোদ্যম করেনি। সে আবার নব উদ্যমে শুরু করেছে লেখা।
গত বইমেলায় তার প্রথম কবিতার বই ‘মুষলধারে বৃষ্টি’ পাঠক প্রিয়তা পেয়েছিল। এবারের বইমেলায় আসছে তার প্রথম উপন্যাস ‘নিচতারা’। আমি অনেক আশাবাদি এই বইটিও পাঠক প্রিয়তা পাবে। যারা তার লেখা পড়েন তারা জানেন তার ভাবের গভীরতা সম্মন্ধে। জীবনকে দেখার তার একটা নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি আছে।
এই উপন্যাস নিয়ে আমি বেশি কিছু লিখবো না। শুধু আপাতত আপনাদের সঙ্গে এই উপন্যাসের প্রচ্ছদটা ভাগাভাগি করে নিতে চাই। বাকিটা লিখবো উপন্যাস প্রকাশিত হওয়ার পর। আসুন আমরা সবাই তাকে স্বাগত জানাই। সূএ: জাগোনিউজ২৪.কম